Wellcome to National Portal

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল, ফুলছড়ি, গাইবান্ধা এর তথ্য বাতায়নে আপনাকে স্বাগতম। আপনার গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগিকে নিয়মিত টিকা প্রদান করুন, কৃমিনাশক ঔষধ প্রয়োগ করুন ও সুষম খাদ্য দিন।

মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

গল্প নয় সত্যি

সংগ্রামী জীবনের স্বনির্ভরশীলতা অর্জনে আমেনা বেগম

আমেনা ঢাকা শহরে রাজমিস্ত্রির জোগালীর কাজ করতো কিন্তু কোভিড-১৯ এর লক ডাউনের কারনে পৈত্রিক নিবাস/ভাইয়ের বাড়িতে কর্মহীন অবস্থায় ফিরে আসে প্রত্যন্ত দুর্গম ফজলুপুর ইউনিয়নের মধ্য খাটিয়ামারী গ্রামে। আমেনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা কোভিড-১৯ লকডাউনের কারনে হতাশায় পরিনত হয়। কর্মহীন জীবন থাকায় ০২ ছেলে নিয়ে কর্মহীন অবস্থায় অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত চলে। কর্মহীন ও হতাশাগ্রস্থের চরম অবস্থার মূহুর্তে একদিন অত্র দপ্তরে পরামর্শ নিতে আসেন। উপজেলা প্রানিসম্পদ অফিসার তাকে প্রানিসম্পদ খাত দিয়ে কিভাবে জীবনে সফল হওয়া যায় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেন এবং সবরকম সহযোগীতার আশ্বাশ দেন। হতাশাগ্রস্থ কাজকর্মহীন আমেনার আবার নতুন  করে জীবন সংগ্রামের  পরিকল্পনা ও প্রত্যাশায় জন্ম নেয় পরিশ্রমী আমেনার। পূর্বে সঞ্চিত টাকা দিয়ে আমেনা ভাইয়ের কাছ থেকে ৪৯.৫ শতাংশ পতিত জমি ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকায় দূর্গম চরে বন্ধক নেয়। ৪৯.৫ শতাংশ জমির মধ্যে ০৫ শতাংশে নিজের থাকার জন্য ঝুপরি ঘর তৈরি করে আর বাকি জমিতে যেমন ১৫ শতাংশে মরিচ বেগুন ও মৌসুম ভিত্তিক সবজি চাষ, ১৪ শতাংশে ভূট্টা ও মাঠ ফসল, ১৫ শতাংশে নেপিয়ার ঘাস চাষ এবং ০.৫ শতাংশে চিনা ও বাদাম চাষ করে। জমানো টাকা দিয়ে আমেনা ৪৫,০০০/- টাকা দিয়ে একটি গাভী ক্রয় করেন। গাভীটি বর্তমানে একটি বাচ্চা দিয়েছে এবং ৩ লিটার করে দুধ দেয় যা প্রতিদিন প্রায় ১৫০/- থেকে ১৭০/- টাকায় বিক্রি করে। ভুট্টা/মাঠ ফসল, চিনা, মরিচ, বেগুন, ও নেপিয়ার ঘাসের উৎপাদন ও পরিচর্যার জন্য ১৫,০০০/- টাকা বিনিয়োগ করে। ১৫,০০০/- টাকা দিয়ে ১০ শতাংশ খাস জমি লীজ নেয়। যেখানে ৩০ টি ইউক্যালিপটাস গাছ, ৫ টি পেয়ারা গাছ ৫ টি আম গাছ, ২টি কাঠাঁল গাছ এখান থেকেও আমেনা ২,০০০/ থেকে ৩০০০/- টাকা আয় করে। তাছাড়া অত্র দপ্তরের পরামর্শে ১৫,০০০/- টাকা একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২ টি ছাগী কেনে। ছাগী ২ টি কেনার পরে ৪ টি বাচ্চা দেয় যা আমেনার জন্য সচ্ছলতার সুবাতাস ও ঋণ পরিশোধের দুয়ার খুলে দেয়। অন্যদিকে সে অত্র দপ্তরের সহযোগীতায় এলজিইডি কর্তৃক পরিচালিত প্রভাতী প্রকল্পের সড়ক রক্ষনাবেক্ষণের কাজে দৈনিক ২৫০/- টাকা হারে দিন হাজিরা ভিত্তিক একজন শ্রমিক হিসাবে যোগ দেয়।

বিনিয়োগকৃত টাকার মোট বাৎসরিক লাভের টাকা দিয়ে আমেনা ২ টি থাকার ঘর দিয়েছে। (একটি সিমেন্টের খুটি দিয়ে টিনের ঘর, অন্যটি সিমেন্টের শীট দিয়ে ছাপড়া ঘর) যেখানে খরচ হয়েছে ৫০,০০০/- টাকা। সোলার প্যানেল নিয়েছে ৮,৭০০/- টাকায়, নলকূপ দিয়েছে ৪,০০০/-টাকা, রান্না ঘর ও গরু ছাগল রাখার জন্য ঝুপরি ঘর দিয়েছে ২,৩০০/- টাকা, ছেলেকে বিয়ে করিয়েছে ৪০,০০০/-টাকা খরচ করে। সোনা ও রুপা মিলে মোট ৬,০০০/- টাকার গহনা কিনেছে (নাঁকফুল ২টি রুপার চুরি ০২ টি গলার মালা একটি)। ফুলছড়ি উপজেলা প্রানিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের সার্বিক পরামর্শ, পরিকল্পনা ও সহযোগীতায় পরিশ্রমী আমেনার সঠিকভাবে বিনিয়োগ কৃত টাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেড়েছে। তাছাড়া সামাজিক ভাবে আমেনার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে কারন সে সরাসরি অত্র দপ্তর সহ উপজেলার অন্যান্য অফিসে গিয়ে পরামর্শ, অনুদান (বিভিন্ন ধরণের ইনপুট সাপোর্ট), মৌসুম ভিত্তিক সবজি ও ফসলের লিফলেট, মৌসুম ভিত্তিক প্রাণিসম্পদের (বিভিন্ন ধরণের ইনপুট সাপোর্ট) লিফলেট/বই নিয়ে গ্রামের পুরুষ মহিলদেরকে দিয়ে সহযোগীতা করছে ও পরামর্শ দিচ্ছে। তাছাড়া প্রয়োজনে মোবাইল ফোনে অত্র দপ্তর সহ অন্যান্য দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছে। আমেনা সমাজের ও গ্রামবাসীর ভবিষ্যতে স্থায়ীভাবে টিকে থাকা ও বেঁচে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে নিজের জীবন সংগ্রামের টিকে থাকার উদাহরণ দিয়ে।

 আমেনা জীবন সংগ্রামে স্থায়ীভাবে টিকে থাকার এক মূর্ত প্রতীক যা অত্র দপ্তরের সহায়তায় হয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রত্যাশাঃ আমেনা পূনঃ বিনিয়োগের মাঠ ফসল (ভূট্রা মরিচ, চিনা) বিশেষ করে ঘাস বিক্রিত টাকা দিয়ে এবং প্রভাতী প্রকল্পের রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত কাজের দৈনিক মজুরী থেকে সঞ্চিত ৫০,০০০/- টাকা যোগার করে আরও ৬৬ শতাংশ পতিত জমি বন্ধক নিবে বলে আশা করেন। যেখানে শুধু নেপিয়ার ও পাকচং-১ জাতের ঘাস চাষ করবে ১২ মাস গো- খাদ্য হিসেবে চরাঞ্চলের চাহিদা মিটবে ও আমেনা অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে। আমেনার পরিকল্পনা ৬৬ শতাংশ জমিতে ঘাস চাষ করলে বছরে সম্ভাব্য ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রি হবে।

পূনঃ বিনিয়োগের আবর্তিত লাভের টাকা সম্ভাব্য ঘাস বিক্রির ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ইউনিয়ন হেড কোয়ার্টারের উঁচু জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য ৫ শতাংশ জমি কিনবে বলে আশা করেন ও বন্ধককৃত ৪৯.৫০ শতাংশ জমি আমেনা নিজের নামে দলিল করে নেয়ার জন্য ভাইকে ৪৭,০০০/- টাকা দেয়ার পরিকল্পনা করেন। তাছাড়া ছাগল বিক্রি, গাভীর দুধ বিক্রির আয় ও প্রভাতী প্রকল্পের রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত কাজের দৈনিক মজুরী থেকে সঞ্চিত টাকা দিয়ে আরও দুটি গরুর বাছুর কিনবে মোটাতাজা করার জন্য যার মূল্য (২৫০০০+২৫০০০) = ৫০,০০০/- টাকা। যাহা আগামী ঈদুল আযহায় সম্ভাব্য প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হবে বলে আমেনা পরিকল্পনা করেছেন। আমেনা আশা করেন যে, উক্ত পূনঃ বিনিয়োগের লাভের টাকা এবং প্রভাতী প্রকল্পের রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত কাজের দৈনিক মজুরী থেকে সঞ্চিত টাকা জমিয়ে আমেনার ছোট ছেলে মনির হোসেন (০৭) এর গলায় টিউমার অপারেশন করাবেন ঢাকার বড় ডাক্তার দিয়ে। আমেনার আশা ছোট ছেলেকে গ্রাম্য ডাক্তার বানিয়ে বাড়ির পাশে বাজারে (তালতলা বাজার) ঔষধের দোকান দিবেন এবং অবহেলিত চরাঞ্চল ও নদীভাঙ্গন এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দিবে বিনা পয়সায়।

মাঠ ফসল, মৌসুম ভিত্তিক সবজি ও ঘাসের খামারের চাষাবাদে গ্রামের ভূমিহীন, বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা ও কর্মহীন যুবকদের কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে আশা করেন আমেনা।

আমেনা মনে করেন কর্মকান্ডগুলির প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন সমস্যা না হলে প্রতিমাসে ৪০,০০০/- থেকে ৫০,০০০/- টাকা আয় বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া বিভিন্ন সামাজিক কাজে মানুষের সেবা করার ইচ্ছা পোষণ করেন। ইউপি সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়ে সমাজের অবহেলিত নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও এলাকার উন্নয়নে পরিকল্পিতভাবে আত্মনিয়োগ করার ইচ্ছা আছে। এছাড়া, অবহেলিত পশ্চাৎপদ চরাঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন অকাল বন্যা ও নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে দলগতভাবে জড়িত হয়ে এলাকাবাসীর অসহায়ত্ব ও দুর্দশা মোচনের জন্য সহযোগীতা ও নেতৃত্ব দেবার আশা রাখেন।

সর্বোপরি, আমেনা অত্র দপ্তরের সহযোগীতায় ভবিষ্যতে একটি নিশ্চিত জীবনের প্রত্যাশা করেন।